অ্যালার্জি একটি অস্বস্তিকর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। শরীরে এলার্জেনের সংক্রমণে চুলকানি, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, এনাফাইলেকটিক শকের মত জটিল উপসর্গ দেখা দেয়। চোখের অ্যালার্জি বর্তমানে অতি পরিচিত একটি রোগ। অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত এলার্জেনের প্রভাবে চোখে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। অভ্যন্তরীণ অ্যালার্জি হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবী। পরিবেশগত যেকোনো উপাদানই বহিরাগত এলার্জেনের অন্তর্ভুক্ত। যেমন: ফুলের রেণু, পোষা প্রাণীর পশম, বাড়ির কার্পেট ও দেয়ালে থাকা আণুবীক্ষণিক কীট, ধুলাবালি, সুগন্ধি, চুলের কৃত্রিম রং, কাজল, সুরমা, চোখে ব্যবহৃত কন্টাক্ট লেন্স ইত্যাদি।

এ ছাড়া খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে চোখে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু খাবারে এটি দৃশ্যমান হারে লক্ষণীয়। যেমন: দুধ, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, ডিম, ব্রাজিল বাদাম, তিল, বেগুন, চিংড়ি, ইলিশ মাছ, কাঁকড়া ও ঝিনুক ইত্যাদি। অ্যালার্জিজনিত নানান রোগের মধ্যে এলার্জিক, ফ্লিকটেন্যুলার (phlyctenular) এবং ভার্নাল (vernal) কনজাংটিভাইটিস উল্লেখযোগ্য।

এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস: বিভিন্ন এলার্জেন, হে ফিভার (Hay Fever), নিওমাইসিন ও এট্রোপিন জাতীয় ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে উপসর্গগুলো দেখা দেয়। চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, ঘনঘন চুলকানি, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা এর প্রধান লক্ষণ।

ফ্লিকটেন্যুলার কনজাংটিভাইটিস: সাধারণত ৪-১৪ বছর বয়সী শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হয় ৷ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অপুষ্টি, কৃমি রোগ, এডিনয়েড, টনসিলাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের কর্নিয়ার চারপাশে ধূসর বা গোলাপি রঙের ফুসকুড়ি (Bleb) দেখা যায় যা পরবর্তীতে ক্ষত সৃষ্টি করে। এ রোগের জটিলতম দিক হতে পারে ফ্লিকটেন্যুলার কেরাটাইটিস (Keratitis), ফ্যাসিকুলার আলসার (Fascicular Ulcer) এবং রিং আলসার (Ring Ulcer)। এর উপসর্গ ঘনঘন দেখা দিলে সঠিক নিরীক্ষণের জন্য যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ভার্নাল কনজাংটিভাইটিস: সাধারণত ৫-১৪ বছর বয়সী ছেলে শিশুরা গ্রীষ্মকালে এ রোগে আক্রান্ত হয়। শীতের শুরুতে এর প্রকোপ কমে আসে। ব্যক্তিভেদে ২১ বছর বয়স পর্যন্তও উপসর্গ দেখা যায়। অসহনীয় চুলকানি, জলযুক্ত শ্লেষ্মা, জ্বলুনি ভাব, খচখচে অনুভূতি, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া (Cobble Stone Appearance), কর্নিয়ার চারপাশে ফোস্কার (Horner Trantas Dots) আনাগোনা এ রোগের প্রাথমিক উপসর্গ। আরেকটি উপসর্গ হলো কেরাটোকোনাস (Keratoconus)। এর ফলে চোখের গোলাকৃতির কর্নিয়া ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে যায় এবং ফুলে যায়। স্বল্প দৃষ্টিরোধে নির্দিষ্ট পাওয়ারের চশমা ও কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা, প্রয়োজনে কোলাজেন ক্রস লিংকিং (CXL) পদ্ধতিতে ক্রমবর্ধমান কেরাটোকোনাসের গাঠনিক পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ, কর্নিয়া প্রতিস্থাপনসহ নানা উপায়ে এর চিকিৎসা করা যায়। এ ছাড়া ভার্নাল কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসায় দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধি  এবং ছানি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত স্টেরয়েড প্রিপারেশন ব্যবহার করা ঠিক না।

এ ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনে কন্টাক্ট লেন্স এবং আর্টিফিশিয়াল টিয়ারের যত্রতত্র ব্যবহার জায়ান্ট প্যাপিলারি কনজাংটিভাইটিসের (Giant Papillary Conjunctivitis) অন্যতম কারণ। চোখের অ্যালার্জির চিকিৎসার একমাত্র পদক্ষেপ হলো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ এবং অনুসরণ। পাশাপাশি ঠান্ডা পানি বা ক্যামোমিল টি ব্যাগের ভাপ নেওয়া, রোদ চশমার ব্যবহার, অ্যালার্জি উদ্রেককারী খাবার পরিহার খানিকটা স্বস্তি এনে দেয়। অ্যালার্জি প্রতিরোধে মাথার খুশকি দূর করা, বাড়িঘর ও চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পোষা প্রাণীকে নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা একান্ত আবশ্যক।

 

লেখক:

ডা. নুসরাত সুলতানা শিমু

সেইফওয়ে আই এন্ড ডেন্টাল হাসপাতাল, মুগদা, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.