মাথা ব্যাথায় কষ্ট পান না, এমন মানুষের দেখা মেলা ভার। এই ব্যথার গতি প্রকৃতি ও তীব্রতা রোগ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় হয়।
মাথা ব্যাথা সাধারণত কম সময় থেকে দীর্ঘ সময়জুড়ে হতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে অরুচি, বমি ভাব, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা, কানে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ, মাথায় ঝিঁ ঝিঁ করা বা দৃষ্টিসীমায় নানা রঙের আলোর রেখা দেখতে পাওয়া। এ সকল ব্যাথা পুঞ্জীভূত বা হাতুড়ির মতো শব্দাকারে ২-৩ দিন বা তারও বেশি দিন স্থায়ী হতে পারে।
কার্যকারণ
চোখের প্রতিসরণজনিত ত্রুটি ও চোখের মাসলের ভারসাম্যহীনতার কারণে মাথা ব্যাথা হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দৃষ্টিসীমায় অসমতা মাথা ব্যাথার প্রধানতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন এ ব্যাথা নির্দিষ্ট সময় পর পর একই নিয়মে ফিরে আসে। লেখাপড়া, সেলাই কিংবা যেকোনো সূক্ষ্ম কাজে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার দরুণ চোখে প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হয়। শেষতক তীব্র মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখাসহ নানা অস্বস্তি দেখা দেয়। এজন্য বিষমদৃষ্টি ও দীর্ঘ দৃষ্টিজনিত অসুবিধা, কাছের বস্তু দেখতে অসুবিধা, এক চোখ অন্য চোখ থেকে দূরে সরে যায় বা বেঁকে যাওয়া এবং কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম দায়ী।
রোগ নির্ণয়
স্লিট ল্যাম্প পরীক্ষা, কন্টাক্ট প্রিজম লেন্স দিয়ে চোখের সামনের চেম্বারের কোণ পরীক্ষা, অপটিক নার্ভের রোগ শনাক্তকরণ, ভিজ্যুয়াল ফিল্ড পরীক্ষার মাধ্যমে গ্লুকোমা রোগ শনাক্তকরণ, চোখের প্রেশার পরিমাপ, টেম্পোরাল আর্টারি এবং দৃষ্টিসীমায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ ত্রুটি নির্ণয় করার মাধ্যমে চক্ষু সম্পর্কিত মাথা ব্যাথা নির্ণয় করা যায়। তাই মাথা ব্যাথা হলেই চক্ষু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ নির্ণয় করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে চোখের প্রতিসরণজনিত ত্রুটি এবং অকুলার মাসলে অসমতা নির্ণয় করতে হবে। পাশাপাশি চোখের এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য রোগের জন্য নিউরোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
করণীয়
১. মাথা ব্যাথা হলে প্রাথমিকভাবে ২০-২০-২০ রুল অনুসরণ করুন।
২. কম্পিউটার স্ক্রিনে কাজ করার সময় ২০ মিনিট পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্যে ২০ মিটার দূরত্বে তাকিয়ে থাকুন।
৩. ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলুন।
৪. কম আলোতে পড়াশোনা করার অভ্যাস পরিহার করুন।
৫. চোখের ব্যাথা তীব্রতর হলে ভিড় ও উচ্চ আওয়াজের কোলাহল এড়িয়ে চলুন।
৬. শয়নকক্ষের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখুন। আলোর উজ্জ্বলতা কমিয়ে বিশ্রাম নিন।
৭. চশমার পাওয়ার পুনরায় চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক পরীক্ষা করুন।
৮. নিয়মিত চশমা ব্যবহার করুন।
৯. চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
১০. সর্বোপরি চোখের যত্ন নিন।
লেখক:
ডা. নুসরাত সুলতানা শিমু
চিকিৎসক, সেইফওয়ে আই অ্যান্ড ডেন্টাল হাসপাতাল, মুগদা, ঢাকা