ঘুমের সময় ক্রমাগত ছটফট করা বা প্রায়ই এপাশ-ওপাশ করাকে অনেকেই বদভ্যাস বলে ধরে নেয়। রাতে ঘুমের মধ্যে এই অস্থিরতার সমস্যার কারণটা কেউ-ই সেভাবে তলিয়ে দেখেন না। যাকে মানুষ বদভ্যাস ভাবে, তা আসলে চিকিৎসার ভাষায় আরএলএস অর্থাৎ রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম। এ সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

লক্ষণ: লেগস সিনড্রোমের উপসর্গগুলো খুবই অস্বস্তিকর। পায়ে ব্যথা হয়, চুলকায়, পায়ে ভর দেয়া কষ্টকর হয়, মাঝেমধ্যে মনে হয় পা অবশ হয়ে গেছে। যেন পায়ের রক্তবাহী নালিগুলো ঠাণ্ডা পানিতে পূর্ণ হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় বসে থাকতে কষ্ট হয়। ঘুমের মধ্যে কিছুক্ষণ পরপর হাত-পা অল্প নাড়াচড়া বা টান ধরে। জেগে থাকা বা বিশ্রামের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে পায়ের নড়াচড়া হয়, কারণ রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে বংশগত ও জিনগত কারণে এমনটা হতে পারে।

এ ছাড়া পেশির কার্যকলাপ ও নিয়ন্ত্রিত নড়াচড়ায় ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম হয়। আয়রনের অভাবে অ্যানিমিয়া, ক্রনিক কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস বা গর্ভাবস্থার অনেকগুলো কারণও এর সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ, ধূমপান, ক্যাফেইন, মদ্যপান, স্থূলতা, দুশ্চিন্তা ও শারীরিক পরিশ্রম কম করলে এমনটা হয়।

প্রতিকার ও চিকিৎসা: রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম কমাতে মেডিকেটেড কমপ্রেস প্যাড খুব উপকারী। এ ছাড়া পাতলা সুতির কাপড় গরম অথবা ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে ও নিংড়ে নিয়ে পায়ের ওপরে রাখলে আরাম লাগে। ম্যাগনেশিয়াম-সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহারে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম কমতে পারে।

রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমের কারণে পায়ে অস্বস্তি শুরু হয়। যখনই পায়ে অস্বস্তি শুরু হয় বা বারবার এপাশ-ওপাশ ফিরতে মন চায়, সেই মুহূর্তেই নিজেকে সংযত করতে হবে, যাতে অস্বস্তি মাথাচাড়া দিতে না পারে।

পায়ের স্ট্রেচিং-জাতীয় হালকা ব্যায়াম করা যায়। ঘুমানোর সময় ভারী কম্বল কিংবা চাদর গায়ে দিয়ে শোয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম কমতে পারে। গায়ের ওপর হালকা চাদর থাকলে যতটা স্বচ্ছন্দে নড়াচড়া করা যায়, ভারী কম্বল বা চাদর থাকলে তার চেয়ে বেশি চেষ্টা করতে হয়। ঘরোয়া উপায়ে অসুখ না সারলে অবশ্যই নিউরো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

 

অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ

নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.