স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের ব্যবহার যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে চোখসহ শরীরের নানা ধরনের সমস্যা। যেমন চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া, চোখে কম দেখা, মাথাব্যথা, চোখব্যথা, ঘাড়ব্যথা, মাজা বা কোমরব্যথা। এমনকি মানসিক সমস্যা ও ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। সমষ্টিগতভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলা হয় কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম।

স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের ক্ষতিকর রশ্মি এবং এর ব্যবহার থেকে চোখ বাঁচাতে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। মুঠোফোনের উজ্জ্বল আলো বহু ক্ষেত্রে চোখে যন্ত্রণা দেয়, বিশেষ করে অন্ধকারে। সে ক্ষেত্রে মুঠোফোনের ডার্ক মোড অর্থাৎ ডার্ক থিম ব্যবহার করুন। অ্যান্টি গ্লেয়ার প্রটেক্টর ব্যবহার করুন। এতে চোখের ওপর ক্ষতিকর নীল রশ্মির প্রভাব কম পড়বে। চোখ শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। অনেক বেশি উজ্জ্বল কিংবা একেবারে অনুজ্জ্বল পর্দা (ডিসপ্লে) এবং এর বৈপরীত্য কোনোটিই চোখের জন্য ভালো নয়। এগুলোয় সামঞ্জস্য রাখতে হবে। যন্ত্রের নির্ধারিত (বিল্টইন) উজ্জ্বলতা সেটিংস ব্যবহারই এ ক্ষেত্রে উত্তম। প্রায় প্রতিটি মুঠোফোনেই থাকে ডিজিটাল ওয়েলবিইং ফিচার। এই ফিচার ব্যবহার করে স্ক্রিন টাইম কমানোর চেষ্টা করতে পারেন। বারবার চোখের পলক ফেলুন। তাতে চোখ ভিজে থাকবে। আধা ঘণ্টা পরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নিন।

অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোনে নাইট লাইট এবং আইফোনে নাইট শিফট সুবিধা ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ফিচারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পর্দার রং ও উজ্জ্বলতায় সামঞ্জস্য আসে। ২০ মিনিট টানা ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলে তারপর অন্তত ২০ সেকেন্ড ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে তাকান। চোখের একেবারে কাছে না ধরে ১৬ থেকে ১৭ ইঞ্চি দূরে রাখুন মুঠোফোন। তাতেও চোখে কম চাপ পড়বে। স্মার্টফোনে লেখার আকার বড় রাখা ভালো। ছোট আকারের লেখার ব্যবহার চোখের ওপর চাপ ফেলে ও ক্ষতি করে।

কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মানতে হবে। যেমন একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে না। আধা ঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট ব্যবহারের পর ব্রেক দিতে হবে ১০-১৫ মিনিট। কম্পিউটারের মনিটর চেস্ট লেভেলে রাখতে হবে। হ্যান্ড রিস্ট ও কিবোর্ড একই সমান্তরালে রাখতে হবে। যখন চোখের ন্যূনতম সমস্যা হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অবহেলা করলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

 

ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ

ফ্যাকো ও গ্লুকোমা সার্জন

নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ আই হাসপাতাল, মিরপুর-২, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.