সারা বিশ্বে এখন করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। সামনে আসছে লেমব্ডা ভেরিয়েন্টও।
প্রেগন্যান্সিতে ‘ডেল্টা’ কী তীব্রতা নিয়ে আসছে আসুন জেনে নিই-
১. গত বছরের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে গর্ভবতীর কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অনেক গুণ বেশি।
আগে সারা মাসে হয়তো একজন গর্ভবতী আসত চেম্বার/হাসপাতালে। এখন গড়ে প্রতিদিন ২/৩ জন ।
২. যে গর্ভবতীরা ভর্তি হচ্ছে তাদের মাঝে শ্বাসকষ্ট, আইসিইউ ভর্তি, মৃত্যু বাড়ছে পাল্লা দিয়ে আগের ওয়েবের তুলনায়।
৩.এক গবেষণায় দেখা গেছে, আগের ওয়েভে আক্রান্ত গর্ভবতীদের ২৫% ভর্তি দরকার হতো।কিন্তু ‘ডেল্টা’ আসার পর থ আক্রান্ত গর্ভবতীদের ভর্তি সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৫%। এবং আলফা ভেরিয়েন্টে ভর্তির হার ৩৬%।
৪.হাসপাতালে ডেল্টা নিয়ে ভর্তি গর্ভবতীদের মাঝে – ২য় ও ৩য় তিন মাসের রোগীর সংখ্যাই বেশী।
৫.এই ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত ভর্তি গর্ভবতীদের শ্বাসকষ্ট, আইসিইউ ভর্তি,ভেন্টিলেটর, মৃত্যু আগের তুলনায় ৫০% বেশি।
৬.সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমানে ভর্তি রোগীদের মধ্যে, ৩৩% এর অক্সিজেন সাপোর্ট এবং ১৫% এর আইসিইউ সাপোর্ট লাগছে।
৭.ডেল্টায় আক্রান্ত হলে মা ও শিশু দু’জনেরই ঝুঁকি:
যেমন-
– সময়ের আগে প্রসব বেদনা।(প্রতি ৫জনের ১জন)
-অপরিণত শিশু।
-প্রি-একলাম্পসিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি।
-যার কারনে সময়ের আগে ইচ্ছাকৃত ডেলিভারি বৃদ্ধি।
– সিজারে বাচ্চা প্রসবের হার দিগুণ বৃদ্ধি।
– কম ওজনের শিশু প্রসব।
– নবজাতকের এনআইসিইউ ভর্তি (প্রতি ৫ জনের ১ জন) বৃদ্ধি।
-মৃত শিশু প্রসব।
৮.আক্রান্তদের মাঝে নিউমোনিয়ার হার আগের ভেরিয়েন্ট এর তুলনায় বেশি।
৯.গর্ভবতী ডেল্টা ভেরিয়েন্ট দিয়ে আক্রান্ত হলে,তার কাছ থেকে অন্যদের সংক্রমণ হারও বেড়ে যায়।
১০.বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম ওয়েভে বলেছিল – অন্যদের তুলনায় গর্ভবতীদের তীব্র কোভিড হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি ।
ধারনা করা হচ্ছে, ডেল্টা ভেরিয়েন্ট দিয়ে আক্রান্ত হলে গর্ভবতীর তীব্র কোভিড হবার সম্ভাবনা আগের ভেরিয়েন্ট এর তুলনায় অনেক গুণ বেশি হবে।
১১.দেখা গেছে, যে সব গর্ভবতী ইতিমধ্যে টীকা দিয়ে দিয়েছে তাদের হাসপাতালে ভর্তি লাগছে না বললেই চলে।কারন টীকা দেয়ার কারনে তারা আক্রান্ত হচ্ছে কম।আর আক্রান্ত হলেও উপসর্গ হচ্ছে কম।
১২.সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি গর্ভবতীদের ৯৮% এর কোভিড টীকা দেয়া নাই। তার মানে টীকার আওতায় না আসার কারনে তারা আক্রান্ত হয়েছে।
১৩.ডেল্টা ভেরিয়েন্ট আমাদের দেশের মতো শ্যামলা/কালো রঙের মহিলাদের বেশি আক্রমণ করে।
কেন? সে আমার অজানা!
হয়তো, ডেল্টা মনে করে
-‘কালো সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।’
সেই আকর্ষন ডেল্টাও ফেরাতে পারছে না!!
১৪.প্রতিরোধ মানেই টীকা:
গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকারী মহিলাদের টীকার আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে বিশ্বের সব গাইনি সংস্থা। এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে
ইংল্যান্ড,আমেরিকা,কানাডা,ইন্ডিয়া সহ অনেক রাষ্ট্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গর্ভবতীদের টীকা দিচ্ছে। কেননা, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে দেখা গেছে, সব ধরনের কোভিড টীকা মা ও গর্ভস্থ শিশুর কোন ক্ষতি করে না।
এছাডা,লেকটেরিং মা দিলেও শিশুর কোন ক্ষতি হয় না। বরং, মা টিকা নিলে শিশুর শরীরে গর্ভফুল দিয়ে, ও পরবর্তীতে মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে ভইরাস প্রতিরোধকারী হাতিয়ার -‘এন্টিবডি ‘ প্রবেশ করে। যা শিশুকে করোনা থেকে নিরাপদ রাখবে। এবং সাথে মাকেও করোনা থেকে নিরাপদে রাখবে।
কোভিড দিনে প্রতিটি মা ভাল থাকুক, সুস্থ থাকুক।
মাতৃত্ব নিয়ে আসুক পরিবারে আনন্দ। মাতৃত্ব যেন কোন মা হারানোর কারন না হয়।
তাই এ সময়ে কোভিড টীকা দিয়ে, প্রতিটি মাকে কোভিড বিরোধী বর্ম পড়িয়ে রেখে, মায়ের চারপাশে সুরক্ষা দেয়াল তৈরী করে দিতে হবে। পরিবার ও সমাজকেই এতে অগ্রণী ভুমিকা রাখতে হবে।
সূত্র : JAMA,UKOSS data
লেখক: ডা. ফাহমিদা রশীদ স্বাতি
সহকারী অধ্যাপক, গাইনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।