অনেক পুরুষই ক্লামাইডিয়া রোগে আক্রান্ত হন। এটি অতি সাধারণ একটি যৌনবাহিত সংক্রমণ। অনেকে হয়তো জানেনই না, তাদের ক্লামাইডিয়া সংক্রমণ রয়েছে। কারণ এ রোগে তেমন উপসর্গ অনুভূত হয় না। যা-ই হোক, ক্লামাইডিয়া যৌনসঙ্গিনীকেও সংক্রমিত করতে পারে। জটিলতার শিকার হতে পারে নবজাতক শিশুও।
যেভাবে সংক্রমণ ঘটে
যে জীবাণুটি সংক্রমণ ঘটায়, এর নাম ক্লামাইডিয়া ট্রাকোমাটিস। এ জীবাণু ব্যাকটেরিয়ার মতো একই ধরনের। সংক্রমণ সাধারণত যৌনসঙ্গমের সময় একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে ছড়ায়। এগুলো অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য পায়ু এলাকায়ও হতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রে ক্লামাইডিয়া সাধারণত মূত্রনালিকে সংক্রমিত করে। মূত্রনালি হচ্ছে একটা নল, যা পুরুষাঙ্গের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। মূত্রনালির মধ্য দিয়ে প্রস্রাব ও যৌনরস (বীর্য) বেরিয়ে যায়।
রোগের উপসর্গ
সচরাচর কোনো উপসর্গ থাকে না। যদি মূত্রনালি সংক্রমিত হয়, তাহলে যেসব উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে তা হলো পুরুষাঙ্গের মাথা থেকে রস নিসৃত হওয়া, প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া করা, এপিডিডাইমিস সংক্রমিত হলে অ-কোষে ব্যথা অনুভূত হওয়া, প্রস্টেট গ্রন্থি সংক্রমিত হলে মূত্রনালি থেকে নিঃসরণ বা প্রস্রাব করার সময় কিংবা প্রস্রাব করার পর ব্যথা অথবা জ্বালাপোড়া করা বা অস্বস্তিবোধ করা অথবা যৌনসঙ্গমের সময় বা পরে ব্যথা করা বা পিঠের নিম্নভাগে কিংবা কোমরে ব্যথা করে। কখনো কখনো প্রস্টেট কিংবা এপিডিডাইমিসের সংক্রমণ হঠাৎ তীব্র হয়। এ ধরনের সংক্রমণের ফলে জ্বর হয় অথবা অসুস্থতার অন্য লক্ষণগুলো দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। পায়ুপথ সংক্রমিত হলে পায়ুপথের চারপাশে জ্বালাপোড়া করা বা পায়খানা করার সময় ব্যথা করে।
রোগ নির্ণয়
চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি রোগটি শনাক্ত করতে পারবেন। মূত্রনালির সংক্রমণ নির্ণয়ে মূত্রনালির মুখের নিঃসরণ পরীক্ষা করা হয়। এ ক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গের মাথায় মূত্রনালির মুখে একটা সরু সোয়াব ঢোকানো হয়। ক্লামাইডিয়ার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষাও করানো হতে পারে। যদি পায়ুপথে উপসর্গ থাকে, তাহলে পায়ুপথের নিঃসরণ পরীক্ষা করাতে হবে। এর পরই বোঝা যাবে সংক্রমণের ধরন এবং কোনো অ্যান্টিবায়োটিক সবচেয়ে ভালো কাজ করবে, তাও নির্ণয় করা সম্ভব হবে। তবে সচরাচর এপিডিডাইমিস ও প্রস্টেট গ্রন্থির সংক্রমণের জন্য দায়ী জীবাণুকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
চিকিৎসা
সাধারণ সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণে সংক্রমণ সেরে যায়। বেশির ভাগ মূত্রনালির সংক্রমণে সাত দিন অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের প্রয়োজন হয়। কখনো কখনো একক মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সংক্রমণের চিকিৎসা করা যেতে পারে। প্রস্টেট গ্রন্থির সংক্রমণের জন্য দুই থেকে চার সপ্তাহ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
লেখক :
ডা. বুলবুল রহমান
সিনিয়র কনসালটেন্ট (বিএইচএমএস) ঢাকা, (বিশেষ প্রশিক্ষণ : ইন্ডিয়া) চেম্বার : এইচ-২৩,
আমতলী, (তৃতীয় তলা) ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশে, এয়ারপোর্ট রোড, ঢাকা।