কৃমি অতি প্রচলিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। আমাদের দেশে শিশুরা এ সমস্যায় বেশি ভোগে। দূষিত ও অপরিচ্ছন্ন খাদ্যদ্রব্য, মলমূত্র এবং মাটি থেকে মূলত কৃমি ছড়ায়। এ দেশে বিভিন্ন ধরনের কৃমির মধ্যে গুঁড়া কৃমি, গোলকৃমি ও ফিতা কৃমির প্রাদুর্ভাব বেশি। শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির ঝুঁকি বেশি থাকলেও যেকোনো বয়সের মানুষের এ সমস্যা হতে পারে।
কৃমির সংক্রমণ সব বয়সী মানুষেরই হয়। আকারে খুব ছোট হওয়া সত্ত্বেও একটি কৃমি প্রতিদিন মানুষের অন্ত্র থেকে শূন্য দশমিক ২ মিলিলিটার রক্ত শুষে নিতে পারে। দীর্ঘদিন শরীরে কৃমি থাকলে শিশুরা অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভোগে। কৃমির সংক্রমণের কারণে বড়রাও ভোগান্তিতে পড়ে। কৃমি-সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমেই জানা দরকার এটি কেন হয়?
কৃমি কেন হয়?
১. বিশুদ্ধ পানি পান না করা
২. খাবারের আগে ও মলত্যাগের পর সাবান ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে হাত না ধোয়া
৩. বাইরের খোলা ও অপরিচ্ছন্ন খাবার খাওয়া
৪. খালি পায়ে চলাফেরা করা
৫. স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার না করা
৬. সঠিক নিয়মে রান্না না করা খাবার খাওয়া
যেভাবে বুঝবেন
১. বমি ভাব অথবা বমি হওয়া
২. পেটে অস্বস্তি, পেটে গ্যাস হওয়া
৩. পেট ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, বদহজম
৪. মলদ্বারের চারপাশে চুলকানো
৫. পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া)
৬. আমাশয় (পায়খানার সাথে মিউকাস ও রক্ত যাওয়া)
৭. দুর্বলতা ও ক্লান্তি
৮. রক্তস্বল্পতা
৯. ওজন কমে যাওয়া
১০. ঘন ঘন সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া হওয়া
১১. ত্বকে চুলকানি বা অ্যালার্জি
কৃমি না হওয়ার জন্য যা করবেন
১. প্রতিবার খাবারের আগে এবং টয়লেটের পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে
২. পান করার পাশাপাশি অন্যান্য কাজে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে
৩. শাকসবজি, ফলমূল খাবারের আগে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে
৪. মাছ-মাংস সঠিক নিয়মে রান্না করতে হবে
৫. স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে
৬. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল দিতে হবে
৭. নিয়মিত ছয়মাস পরপর পরিবারের সব সদস্যের একসঙ্গে কৃমিনাশক সেবন করতে হবে (কৃমির সমস্যা না থাকলেও)
যেসব ধারণা ভুল
১. চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে কৃমি হয়
২. শীতকালে, গরমকালে, আকাশে মেঘ থাকলে কৃমিনাশক খাওয়ানো যায় না
৩. গর্ভবতী মাকে কৃমিনাশক খাওয়ানো যায় না
লেখক:
ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুক
জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ