নারীদের ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারকে বলা হয় নীরব ঘাতক। কারণ এটি সুস্পষ্ট কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়াতে পারে এবং ৭০-৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অনেকটা ছড়িয়ে পড়ার পর অ্যাডভান্সড স্টেজে ধরা পড়ে। প্রত্যেক নারীর জীবনকালে ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় প্রতি ৭৮ জনে একজন ও মৃত্যুর ঝুঁকি ১০৮ জনে একজন। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিশ্বব্যাপী ৮ মে ওভারি ক্যানসার দিবস পালিত হয়ে থাকে।

কোন বয়সে শঙ্কা বেশি: মেনোপজের পর এ রোগের ঝুঁকি বাড়লেও যেকোনো বয়সের নারী ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। বয়সভেদে ডিম্বাশয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার হয়ে থাকে।

উপসর্গ বা লক্ষণ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ রোগের সুস্পষ্ট লক্ষণ থাকে না। তাই শরীরের অন্যত্র অনেকটা ছড়িয়ে পড়ার পর এটি প্রকাশিত হয়।

কিছু সাধারণ লক্ষণ: পেট ফাঁপা বা ফুলে যাওয়া; অরুচি/ক্ষুধামান্দ্য/অল্প খাবারেই পেট ভরে ওঠা; বমি ভাব/বমি হওয়া; তলপেট বা কোমরে ব্যথা; পেটে চাকা অনুভব করা; প্রস্রাব-পায়খানার অভ্যাসে পরিবর্তন হওয়া প্রভৃতি।

যারা বেশি আক্রান্ত হন: যারা বন্ধ্যত্বের সমস্যায় ভুগছেন কিংবা কম সন্তান ধারণ করেছেন; যাদের পরিবারে বিআরসিএ ওয়ান/টু মিউটেশন থাকে; নিজের বা পরিবারের অন্যদের ব্রেস্ট, জরায়ু বা কোলন ক্যানসার থাকলে; যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিয়ে থাকেন।

রোগনির্ণয়: উপসর্গগুলোর পর্যালোচনা ও শারীরিক পরীক্ষার পর সন্দেহ হলে আলট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান, ক্যানসার মার্কার, পেট বা ফুসফুসের পানি পরীক্ষা প্রভৃতির মাধ্যমে রোগটি নির্ণয় করা হয়।

চিকিৎসা: বয়স ও রোগের স্টেজের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়, যেমনÑ অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, হরমোন থেরাপি প্রভৃতি।

যেহেতু এ রোগের সুনির্দিষ্ট লক্ষণ নেই, তাই যাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে তারা, অথবা উপরিউক্ত লক্ষণ থাকলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় অনেকাংশে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।

 

ডা. ফারহানা তারান্নুম খান

স্ত্রীরোগ ও গাইনি অনকোলজি বিশেষজ্ঞ

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.