জ্বর কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গমাত্র। শরীরে কোনো জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে বা প্রদাহ হলে জ্বর হয়। সারা বছরই বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে। একেক ঋতুতে একেক সংক্রমণের প্রকোপ বেশি থাকে। তবে এ সময়, মানে বর্ষার শেষে জ্বরের কারণ ও মাত্রায় বৈচিত্র্য বেশি থাকে। তাই সাবধানে জ্বরের চিকিৎসা করতে হবে।
এ সময় জ্বরের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ডেঙ্গু, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, কোভিড-১৯, সাধারণ সর্দি-কাশি, টনসিলে প্রদাহ ও ডায়রিয়া অন্যতম।
করণীয়
- প্রথমত, জ্বর কমাতে হবে। এ জন্য কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মোছানোর পাশাপাশি প্যারাসিটামল খাওয়ানো যায়। এ ক্ষেত্রে প্যারাসিটামলের মাত্রা ঠিক না হলে জ্বর সহজে কমবে না।
- শরীর মোছানোর জন্য অবশ্যই কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে, না হলে সাময়িকভাবে শরীর ঠান্ডা মনে হলেও আসলে জ্বর কমবে না।
- জ্বরের সঙ্গে শরীরে ব্যথা বা দ্রুত জ্বর কমানোর জন্য ভুলেও ব্যথানাশক বড়ি সেবন করা যাবে না। কারণ, ডেঙ্গু জ্বর হলে সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
- বাড়িতে বিশ্রাম নিতে হবে। যথেষ্ট পানি ও তরল পান করতে হবে। খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
- অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে গেলে।
- কিছুই খেতে না পারলে।
- বমি হতে থাকলে।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধলে বা রক্তক্ষরণ হলে।
- অতিরিক্ত মাথাব্যথা বা চোখব্যথা কিংবা ডায়রিয়া।
- শিশু, বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা বা জটিল রোগাক্রান্ত ব্যক্তি।
অকারণে অ্যান্টিবায়োটিক নয়
ভাইরাস জ্বর সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যেই ভালো হয়। কোনো অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। শুধু উপসর্গের জন্য চিকিৎসা লাগে। আর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হবে। তবে সবার আগে চিকিৎসক আপনার উপসর্গ দেখে কিছু পরীক্ষা করতে পারেন। সাধারণত ব্লাড কাউন্ট, ডেঙ্গু পরীক্ষা, রক্ত-প্রস্রাবের কালচার, বুকের এক্স-রে ও প্রয়োজনে অন্য পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। যৌক্তিক মনে করলে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করতে পারেন চিকিৎসক। ডেঙ্গু ধারণা করলে অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে না। তবে সঙ্গে অন্য ইনফেকশন থাকলে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। চিকিৎসক মনে করলে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শও দিতে পারেন।
কিছু পরামর্শ
- সব ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত ও পরিমিত পরিমাণে তরল খেতে হবে। না বুঝে বারবার ওরাল স্যালাইন, অতিরিক্ত ডাবের পানি বা ফলের জুস না খাওয়াই ভালো।
- চিকিৎসক ছাড়া দোকানদার বা আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ও শিরাপথে স্যালাইন দেবেন না।
- রোগী অতিরিক্ত অসুস্থ হলে চিকিৎসকের চেম্বারে দেখানোর জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত হাসপাতালে নিলে অনেক ধরনের জটিলতা ও মৃত্যু এড়ানো সম্ভব।
মনে রাখতে হবে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও চিকিৎসায় রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
ডা. রাশেদুল হাসান
সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ