অনেক সময় তুচ্ছ অনেক দৈনন্দিন অভ্যাসের কারণে আমরা পিঠের ব্যথায় ভুগি। কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলে এই ব্যথার হাত থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

এক. দীর্ঘ সময় কুঁজো হয়ে বসে থাকলে বা চেয়ারে বাঁকা হয়ে বসলে মাংসপেশিতে চাপ পড়ে। কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। ৯০ ডিগ্রি কোণ করে ও চেয়ারের চাকার কাছাকাছি বসার চেষ্টা করুন। পা ছড়িয়ে বসার কারণে পিঠ সঠিক অবস্থানে থাকে না। অফিসের চেয়ার মেরুদণ্ডের বাঁকা স্থানের ভার ঠিকভাবে নিচ্ছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। কারণ, বসার সময় মাথা সোজা ও মেরুদণ্ড চেয়ারের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকানোর সময় সামনে ঝুঁকে পড়বেন না।

দুই. কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি নেয়ার অভ্যাস না করলে পিঠে ব্যথা ও পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আধা ঘণ্টা পরপর কিছুক্ষণের জন্য উঠে দাঁড়ালে এবং হাঁটাহাঁটি করলে উপকার পাওয়া যাবে।

তিন. দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মানসিক চাপও পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে। শান্ত বা চাপমুক্ত থাকার অভ্যাস করতে হবে। ভালো বই পড়া যেতে পারে অথবা বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে আনন্দদায়ক মুহূর্ত কাটানো যেতে পারে।

চার. একটি ভালো তোশক সাধারণত ৯ থেকে ১০ বছর টেকসই হয়। ঠিকভাবে ঘুমাতে না পারলে বা পিঠে অস্বস্তি হলে পাঁচ থেকে সাত বছর অন্তর তোশক পরিবর্তন করা উচিত। বেশি শক্তও না আবার বেশি নরমও না, এমন তোশক ব্যবহার করতে হবে। শক্ত তোশকে ঘুমালে মেরুদণ্ডে বেশি চাপ পড়ে।

পাঁচ. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সয়া, বাদাম, শাকসবজি, বিভিন্ন প্রোটিনজাতীয় খাদ্য, যেমন মুরগি, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস ও ফল খেতে বলা হয়।

ছয়. কাঁধে প্রতিদিন ভারী ব্যাগ বহন করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে। ভারী ব্যাগ কাঁধের ভারসাম্য ও মেরুদণ্ডের বক্রতা নষ্ট করে। ব্যবহƒত ব্যাগের ওজন শরীরের ওজনের তুলনায় কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না। প্রয়োজনে জিনিসপত্র ভাগ করে দুই ব্যাগে নেয়া যেতে পারে। এতে কাঁধের ওপর চাপ কম পড়বে।

সাত. হাই হিল পরলে পিঠ বাঁকা হয়ে থাকে। মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে একদম ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পরলে পায়ের পাতার প্রান্তে চাপ পড়ে। এতে শরীরের ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। পায়ের জন্য আরামদায়ক জুতা বা স্নিকারস সবচেয়ে ভালো। ক্ষেত্রবিশেষে ফ্যাশনেবল জুতাও বাদ দেয়া দরকার নেই। শুধু অনেক দূর হাঁটতে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য হিল পরা বাদ দিন।

আট. কখনও কখনও মোটরসাইকেল বা সাইকেল চালানো শুরু করার পর পিঠে ব্যথা শুরু হয়। ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ বাইকার পিঠে ব্যথা অনুভব করেন। সাধারণ সাইকেলের ক্ষেত্রে ঊরুসন্ধি থেকে হ্যান্ডেল বার এক থেকে দুই ইঞ্চি সামনে থাকবে। আর মাউন্টেইন বাইকের ক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় ইঞ্চি সামনে থাকবে। প্যাডেল নিচে থাকলে সিটে বসা অবস্থায় পায়ের অবস্থান হতে হবে ঘড়িতে ছয়টা বাজার কাঁটার মতো। বাইকের হাতল ধরার সময় কনুই অল্প বাঁকবে। তবে হাতে কোনো চাপ পড়লে বুঝতে হবে সমস্যা আছে।

 

এম ইয়াছিন আলী

চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট

ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.