আমাদের খাদ্যতালিকায় সুষম খাবারের ঘাটতি থেকে যায় অনেকাংশে। যে কারণে সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরক খাবারের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা বাড়ছে। সাধারণত এসব সাপ্লিমেন্ট বাজারে পাওয়া যায় ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে। মুখে খাওয়া যায় বলে এসব সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট বেশ জনপ্রিয়। তবে অনেকেই দিনের পর দিন এসব সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট খেয়ে যাচ্ছেন, অথচ তাঁরা হয়তো জানেনও না এসব আদতে কতটা কার্যকর। সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেটের কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে আপনি দিনের কোন সময় খাচ্ছেন। সঠিক সময়ে খেলে সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট খুব ভালোভাবেই আপনার পুষ্টির দৈনিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।

মাল্টিভিটামিন

বাজারে যত সাপ্লিমেন্ট আছে, তার মধ্যে মাল্টিভিটামিন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মাল্টিভিটামিন সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয় যদি আপনি সকালের নাশতার সময় খান। কিছু ভিটামিন, যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই, কে—এসব খাবার খাওয়ার সময় খেলে বেশি ভালো কাজ করে।

এ ছাড়া মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট দিনের বেলা খেলে পুরো দিন আপনার দৈনিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। তবে খালি পেটে মাল্টিভিটামিন খেলে অনেকেরই বমি বমি লাগে। সে ক্ষেত্রে খাবার খাওয়ার সময় বা খাবার খাওয়ার পর মাল্টিভিটামিন খাওয়া যেতে পারে।

ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সম্পূরক খাবার। কারণ, অনেক খাবারে ভিটামিন ডি আলাদাভাবে পাওয়া যায় না। ভিটামিন ডি আমাদের হাড়ের গঠন ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ভিটামিন ডি স্নেহজাতীয় খাবারের সঙ্গে, যেমন দুধের সঙ্গে খেলে বেশি ভালো কাজ করে। ভিটামিন ডি দুপুরের খাবার বা রাতের খাবারের সঙ্গে খাওয়া বেশি ভালো। এ ছাড়া একটা নির্দিষ্ট সময়েই ভিটামিন ডি খাওয়া শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার জন্য জরুরি।

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পূরক খাবার, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় ও শরীরের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। ভিটামিন সি গ্রহণের ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে। তবে দেখা গেছে, পুরো ডোজ দুই ভাগে বা কয়েকটি ভাগে গ্রহণ করা হলে এটি বেশি কার্যকর হয়।

নিয়ম মেনে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সেবন জরুরি

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

ভিটামিন ডির মতো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও একইভাবে স্নেহজাতীয় খাবারের সঙ্গে খেলে ভালো। দুপুরের বা রাতের খাবারের সঙ্গে এটি খেলে বেশি ভালো কাজ করে। এটি হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।

ক্যালসিয়াম

ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের গঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট ৫০০ মিলিগ্রাম বা তার কম মাত্রায় একবার করে নেওয়া ভালো। এর বেশি নেওয়ার প্রয়োজন হলে কয়েকটি ভাগে খাওয়া যেতে পারে। এটি ভরা পেটে খেলে বেশি ভালো কাজ করে। খালি পেটে খেলে অনেক সময় গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। দেখা গেছে, ভিটামিন ডির সঙ্গে খেলে এর কার্যকারিতা আরও বেড়ে যায়।

আয়রন

আয়রন সাপ্লিমেন্ট রক্তশূন্যতার রোগীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নারীর রক্তশূন্যতা থাকে বলে তাদের নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট খেতে হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আয়রন ট্যাবলেট খালি পেটে খেলে বেশি ভালো কাজ করে, বিশেষ করে সকালবেলা খেলে বেশি কার্যকর। তবে অনেকে বলেন, খালি পেটে খাওয়ার পর গ্যাসের সমস্যায় ভুগেছেন। সে ক্ষেত্রে খাবারের সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে বা কমলার রসের সঙ্গে খেলে এটি বেশ ভালো কাজ করে। মনে রাখতে হবে, আয়রন ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট একসঙ্গে একই সময় খাওয়া ঠিক নয়। একই সময় খেলে এদের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

ম্যাগনেশিয়াম

ম্যাগনেশিয়াম আমাদের শরীরের মাংসপেশির কার্যকারিতার জন্য খুবই দরকারী। এ ছাড়া ম্যাগনেশিয়াম আমাদের ঘুমের জন্য খুব উপকারী। ম্যাগনেশিয়াম সাধারণত সন্ধ্যায় বা রাতে খাওয়া ভালো। এতে ঘুম ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ম্যাগনেশিয়াম মূল খাবারের সঙ্গেও খাওয়া যায়, আবার আগেও খেতে পারেন।

ভিটামিন বি

ভিটামিন বি সাপ্লিমেন্ট আমাদের শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সাধারণত ভিটামিন বি সাপ্লিমেন্ট সকালে বা বিকেলের শুরুতে গ্রহণ করা ভালো। সকালের নাশতা বা দুপুরের খাবারের পরপর খেলে শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এটি আমাদের শরীরের বিপাকক্রিয়াকেও সাহায্য করে। এটি যেহেতু আমাদের শরীরের শক্তি বাড়ায়, তাই অনেক সময় রাতে খেলে ঘুমে বিঘ্ন হতে পারে।

প্রোবায়োটিক

প্রোবায়োটিক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। প্রোবায়োটিক আমাদের অন্ত্রনালির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। চিকিৎসকেরা সাধারণত প্রোবায়োটিক খালি পেটে, যেমন সকালের নাশতার আগে অথবা ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেতে বলেন। এ রকম সময়ে খেলে সাপ্লিমেন্ট দ্রুত পাকস্থলী থেকে অন্ত্রনালিতে পৌঁছাতে পারে।

কোলাজেন

কোলাজেন সাধারণত সকালে বা খাবারের সঙ্গে খেলে ভালো। এটি শরবত, কফি বা অন্যান্য পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে, এসব সাপ্লিমেন্ট কখনো দৈনন্দিন সুষম খাবারের বিকল্প নয়। একজন চিকিৎসক যদি মনে করেন আপনার জন্য সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন, তাহলেই এ রকম সাপ্লিমেন্ট সেবন করা উচিত। তবে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা মানে এই নয় যে আপনি সুষম খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। দৈনন্দিন পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে যখন আপনি প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন, তখনই আপনার শরীর সুস্থ থাকবে।

 

ডা. সাইফ হোসেন খান

মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.