কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে রোদ-বৃষ্টি হচ্ছে। শিশুদের মৌসুমি জ্বর এখন ঘরে ঘরে। আবার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপও বেড়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা জ্বরকে ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ হিসেবেই ধরে থাকেন। শিশুদের শরীরে ঢুকে পড়া জীবাণুর বংশবৃদ্ধিতে বাধা দিয়ে ও জ্বরের মাধ্যমে জীবাণু প্রবেশের লক্ষণ প্রকাশ করে জ্বর মূলত উপকারই করে। যদিও শিশুদের গা গরম হলে মা–বাবার মাথা ঠিক থাকে না। একটু পরপর জ্বর মাপা আর কতক্ষণে স্বাভাবিক হচ্ছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। গা গরম মানেই জ্বর নয়। শিশুর জ্বর বলতে শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হতে হবে।
অনেক সময় শিশুর গা গরম দেখলেই অভিভাবকেরা অস্থির হয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর নিয়মিত প্যারাসিটামল সিরাপ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এতে ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত জ্বর ১০২.২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি না হলে আর শিশু অতিরিক্ত অসুস্থ না হলে প্যারাসিটামল দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ ১০-১৫ মিলি গ্রাম হিসেবে প্রতি চার থেকে ছয় ঘণ্টা অন্তর খাওয়ানো যায় এবং ১০-২০ মিলি গ্রাম হিসেবে পায়ুপথে প্রয়োগ করা যায়। সহজ হিসাবে প্রতি ৮ কেজি ওজনের শিশুর জন্য ১ চামচ প্যারাসিটামল সিরাপ দেওয়া যায়। তবে দিনে চারবারের বেশি এবং ৬০ মিলির বেশি প্যারাসিটামল না দেওয়া ভালো। ছোট শিশুদের মুখে সিরাপ দেওয়ার চেষ্টা করাই ভালো। সাধারণত প্যারাসিটামল খাওয়ানোর ৩০ মিনিট পর ওষুধের কার্যকারিতা শুরু হয়।
সাপোজিটরি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। এ সময়ের জ্বরের একটি অন্যতম কারণ হলো ডেঙ্গু জ্বর, আর এতে রক্তে প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। তখন শিশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে।
জ্বর হলে শিশুকে অতিরিক্ত কাপড় পরিয়ে রাখা বা বেশি কম্বল–কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত নয়। এতে তাপমাত্রা কমায় বাধাগ্রস্ত হয়। শিশুকে আলো-বাতাসপূর্ণ ঘরে রাখা উচিত।
জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়ানোর মাধ্যমে তাপমাত্রা কমানোর পাশাপাশি জ্বরের সঠিক কারণ বের করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। রোগ শনাক্ত হলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।
ডা. ফারাহ দোলা
বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।